ডিজিটাল যুগে সত্যায়িত কোন? সত্যায়িত এর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট | Which is attested in the digital age? Postmortem report of the attested

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির বাজারে,প্রতিটি ক্ষেত্রে ছবি সত্যায়িত করা প্রয়োজন পড়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার সকল সার্টিফিকেটের ফটোকপি সত্যায়িত করা প্রয়োজন পড়ে। প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে সত্যায়িত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বলা থাকলেও সত্যায়িত নিয়ে তেমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়না। সরকারি-বেসরকারি যে কোনো ভাল চাকরি বিজ্ঞাপনে পিএসসির কয়েকটি আবেদন ব্যাতীত প্রতিটি আবেদনপত্রে ছবি এবং সনদপত্রের "সত্যায়িত" অনুলিপি চাওয়া হয়। প্রয়োজনীয় এ ‘সত্যায়িত’ করতে গিয়ে আনেকে হয়রানি-দুর্ভোগ ভীষণ অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। এ শহরে প্রথম শ্রেণির কোনো সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না সকলকে । ফলে প্রতিটি আবেদনের জন্য সত্যায়িত আমাদের ছবি বা কাগজপত্র সত্যায়িত করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। অনেক সময় অনেক অনুরোধ করার পর কেউ কেউ সত্যায়িত করে দেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা বিরক্তি প্রকাশ করে অপমানজনক কথা শুনিয়ে দেন। তাদের এ আচরণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি আমরা।


প্রশ্নঃ সত্যায়ন কেন করা হয়?
উত্তরঃ- চাকরি বা যে কোনো আবেদনপত্রে সত্যায়িত চাওয়া হয় কারণ আবেদনপত্রে আপনার দাখিলকৃত ডকুমেন্ট সত্যি কিনা অথবা আসল ডকুমেন্টের অনুলিপি কিনা সেটা
একজন সাইন করে সাক্ষ্য দেবেন। স্বাক্ষী এমন ব্যক্তি হবেন যার সাক্ষ্য বিশ্বাস করার যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা এদের
মধ্যে অষ্টম গ্রেড থেকে তদুর্ধ্ব, বিশেষ ক্ষেত্রে সাংসদ, মেয়র বা স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান, সরকারি অধ্যক্ষ, গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সত্যায়নের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নঃ পরিচিত কেউ না থাকলে,সত্যায়িত কিভাবে করব?

উত্তরঃ- আপনি যদি ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার্থী হয়ে থাকেন তবে সত্যায়িত না করলেও তেমন সমস্যা
নেই। সত্যায়িত না করা হলে তেমন হয়রানীর স্বীকার হতে হয় বলে এমন কোন তথ্য এখন পর্যন্ত নেই। তবে আপনি যদি চাকরি প্রত্যাশী হয়ে থাকেন এবং কোন চাকরির জন্য আবেদন করে থাকেন তবে আপনাকে সত্যায়িত কাগজপত্র ও ছবি দেয়াটাই ভালো। আর আপনার একান্ত পরিচিত কেউ না থাকলে যদি কোন পরিচিতি ফাস্ট ক্লাস গেজেট অফিসারের সন্ধান পান তবে একইসাথে অনেকগুলো কাগজপত্র ও ছবি সত্যায়িত করে রাখবেন। তাহলে আর ভবিষৎ এ হয়রানীর স্বীকার হতে হবেনা।

প্রশ্নঃ নিজে সত্যায়িত "সিলমোহর" বানিয়ে সত্যায়িত করলে কি কোন ঝামেলা হবে?

উত্তরঃ আপনি চাইলে যেকোন সিলমোহর বানানোর দোকান থেকে গিয়ে আপনার মনমত সিল বানিয়ে নিতে পারেন এটি বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তির ক্ষেত্রে করা যায় কিন্তু সরকারী চাকরীতে এই কাজ করলে আপনার হয়রানীর স্বীকার সহ মামলা খেতে পারেন।

প্রশ্নঃ সত্যায়িত করার ক্ষেত্রে দূর্ভোগ
এড়াতে কি করা যায়?

উত্তরঃ- দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে ভূয়া সীল দেশে লাখ লাখ চাকরি প্রার্থী রয়েছে যারা প্রতিদিন চাকরির আবেদন করার জন্য ছবি ও কাগজপত্র সত্যায়িত করতে সরকার নির্ধারিত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের পিছনে পিছনে ঘুরতে হয়। এক্ষেত্রে তারা সীমাহীন দুর্ভোগের স্বীকার হন। শুধু চাকরিই নয়, দেশে শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় সব নাগরিককে লেখাপড়া,পাসপোর্ট আবেদন, বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র বাধ্যতামূলক সত্যায়িত করতে হয়। সরকার নির্ধারিত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার কাছে সত্যায়িত করতে গেলে ওই কর্মকর্তা ম্যানেজ করতে পারা রীতিমত ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হয়। এ সময় সরকারি এই কর্মকর্তার কটূ কথা বা বাজে আচরণও হজম করতে হয়। এছাড়া অনেকেই আবার সত্যায়নের জন্য নির্দিষ্ট অংকের টাকা নিয়ে থাকেন। এসব ঝামেলা এড়াতে বাধ্য হয়ে অনেকেই ভুয়া "সত্যায়িত" সীল বানিয়ে জালসই দিয়ে নিজের সত্যায়িত নিজেই করেন। ভুয়া সত্যায়ন ও সই জাল করার বিষয়ে আহমেদ হিমেল (ছদ্দ নামম)  দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি জাতীয় যাদুঘরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে আবেদনের জন্য ছবি ও কাগজপত্র সত্যায়িত করতে গিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। আমাকে কেউ
চেনেন না বলে সত্যায়িত করাতে পারিনি। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে একটি ভুয়া সীল বানিয়েছি। তিনি জানান, নীলক্ষেতসহ ঢাকা শহরের যে কোনো সীলপ্যাড তৈরীর দোকানে এসব ভুয়া সীল ৫০-৮০ টাকার বিনিময়ে তৈরী করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক চাকরিপ্রার্থী ভূয়া সত্যায়ন বিষয়ে বলেন, বেশিরভাগ সরকারি চাকরিসহ যে কোনো চাকরির ক্ষেত্রেই আবেদনের সঙ্গে "সত্যায়িত" কাগজপত্র জমা দিতে হয় কিন্তু বিসিএস কর্মকর্তাদের ধরে সত্যায়িত করার যে দুর্ভোগ তা থেকে বাঁচতে কখনো জালিয়াতির আশ্রয় নিতে হয়, যদিও সব কাগজপত্রই আসল। সত্যায়ন এখতিয়ার পাওয়া ব্যক্তিরা যা বলেন সত্যায়িত করতে দুর্ভোগ ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনীহার কারণেই প্রার্থীরা বাধ্য হয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে এমন অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সত্যায়ন করার এখতিয়ার ও সত্যায়ন করতে সরকারি নির্দেশের পরেও কেন সত্যায়িত করতে করতে চান না? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩১ তম বিসিএস এর একজন শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, অপরিচিত কারও ছবি বা কাগজপত্র "সত্যায়িত" করার নিয়ম নেই। এক্ষেত্রে মূল কাগজপত্র উপস্থাপন করলেও ওই ব্যক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত না হয়ে "সত্যায়িত" করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ওই ব্যক্তি যদি "সত্যায়িত" করা কাগজপত্র নিয়ে কোনো রকম জালিয়াতির আশ্রয় নেন, এবং তা
নিয়ে যদি বড় ধরনের কোনো বিপত্তির সৃষ্টি হয় তাহলে এর দায়ভার সম্পূর্নই এসে পড়বে আমাদের (সংশ্লিষ্ট ক্যাডার) ওপর। তাই ঝামেলা এড়াতে ‘সত্যায়িত’-এর ব্যাপারে আমরা একটু
সচেতন থাকি।

প্রশ্নঃ ডিজিটাল যুগে সত্যায়িত কেন?

উত্তরঃ- যারা সত্যায়িত করতে গিয়ে হয়রানীর স্বীকার হয় তাদের একটিই প্রশ্ন "ডিজিটাল যুগে সত্যায়িত কেন" আসলে এটি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে বলে এই নিয়ম পরিবর্তন
করছেনা, অপরদিকে এই নিয়মের তেমন কড়াকড়ি ও করছেনা। তবে সত্যায়ন প্রার্থীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সত্যায়ন বিষয়ে সরকারের উচিৎ সহজ ও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এতে চাকরিপ্রার্থীরা
অযাচিত বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাবেন। বন্ধ হচ্ছে সত্যায়ন? এদিকে সরকারি চাকরির আবেদনে হয়রানি কমাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সত্যায়ন বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছিল
জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। তবে তা শুধু পিএসসি’র আবেদনের ক্ষেত্রেই মানা হয়। সত্যায়ন বন্ধ করতে সচিব কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একটি পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। পরিপত্রে বলা হয়েছিল, `বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে নিয়োগসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের আবেদনপত্রের সঙ্গে নানা ধরনের কাগজপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি চাওয়া হয়। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় এসব কাগজপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি সংরক্ষণ ও পর্যালোচনা অনেক শ্রম এবং সময়সাপেক্ষ। এর পরিবর্তে আবেদনপত্রে আবেদনকারীর ছবি এবং প্রয়োজনীয় তথ্যসংবলিত এক পাতার নির্ধারিত ফরমে আবেদন গ্রহণ ও মৌখিক পরীক্ষার সময় তথ্য যাচাই বাছাই করা হলে প্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকরণ সহজ হবে।` উক্ত পরিপত্র জারির পর থেকেই জনপ্রশাসন তথা পিএসসির কোনো আবেদনেই সত্যায়ন চাওয়া হয় না। তবে পিএসসির বাইরে সরকারি চাকরির যত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় তার প্রত্যেকটিতে সত্যায়ন চাওয়া হয়। জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, অনলাইনে শিক্ষা সনদ দেওয়া,
পাসপোর্টসহ নাগরিক তথ্য ‘ডিজিটালাইজড’ হয়ে গেলে কয়েক বছর পর এসব সত্যায়নের আর প্রয়োজন হবে না। 

‘সত্যায়িত' করা নিয়ে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন গ্রাম ও মফস্বল এলাকা থেকে আসা চাকরি প্রত্যাশীরা। সাধারণত তাদের জানাশোনা গেজেটেড কর্মকতা থাকেন না, গ্রাম পর্যায়ে ভুয়া
সিলের ব্যবস্থা বা ব্যবহারও খুব একটা নেই।
ফলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদেরই।’

সত্যায়িত নিয়ে আমাদের এই পোস্ট'টি আপনার জন্য উপকারী মনে হলে আমাদের কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করুন।