History of New Year celebrations। নতুন বছর উদযাপন ইতিহাস

সময়ের আবর্তনে আরো একটি নতুন বছর চলে
এসেছে। ইতোমধ্যেই বিশ্ববাসী বরণ করে
নিয়েছে ২০২১ সালকে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই
নিউ ইয়ার কিংবা নববর্ষ উদযাপনে সংস্কৃতি
চালু রয়েছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিভিন্ন
সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠির লোকজন তাদের
নিজস্ব রঙে ও ঢঙে নববর্ষ পালন করে থাকেন।
তো এই নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের পিছনের
ইতিহাসটা ঠিক কেমন? কীভাবে পহেলা
জানুয়ারি পেল বছরের প্রথম দিনের মর্যাদা,
বিশ্বব্যাপী দিনটিকে কেন এত সমাদরের সঙ্গে
বরণ করে নেয়া হয়? বছরের প্রথম দিনটিকে নববর্ষ হিসেবে পালনের রীতি প্রায় চার হাজার বছর যাবত মানব সভ্যতার মাঝে চালু রয়েছে।
আজকালকার দিনে নিউ ইয়ার উদযাপনের শুরুটা হয় গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের শেষ দিন
৩১শে ডিসেম্বর সন্ধ্যায়, যা বিশ্বব্যাপী নিউ
ইয়ার'স ইভ নামে পরিচিত। এ উৎসব আয়োজন
চলতে থাকে বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা
জানুয়ারির সারাদিন জুড়ে।

নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের প্রথম রেকর্ড পাওয়া
যায় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের কাছাকাছি
সময়ে তৎকালীন ব্যাবিলনে। সে উৎসব
ব্যাবলিনীয়রা পালন করত বসন্তে, মার্চের
শেষভাগে যখন বিষুব অঞ্চলে দিন ও রাত সমান
দৈর্ঘ্যে উপনীত হতো। দিনটি তারা স্মরণীয় করে
রাখতো 'আকিতু' নামে জাঁকজমকপূর্ণ এক ধর্মীয়
উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে। ব্যাবিলনীয়নদের
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, আকাশের দেবতা
মারদুক এক ভীষণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সমুদ্রের
পিশাচিনী তিয়ামাতকে পরাজিত করেন।
ব্যাবিলনীয়দের আকিতু উৎসব ছিল সে
বিজয়গাথাকে স্মরণ করার উৎসব। এটিকেই তারা নববর্ষ হিসেবে পালন করত। উৎসবটির রাজনৈতিক তাৎপর্যও কম ছিল না। এদিন নতুন ব্যাবিলনিয় রাজাকে মুকুট পরিয়ে দেয়া হতো, অথবা পুরাতন রাজার শাসন দন্ডকে প্রতীকিভাবে নবায়ন করা হতো। বছর গণনা সম্পর্কে এখানে একটি তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন। রোমান ক্যালেন্ডারকে সূর্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে জুলিয়াস সিজার তাতে অতিরিক্ত ৯০টি দিন যোগ করেছিলেন। এভাবেই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের উদ্ভব হয়। এরকমই প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসে বিভিন্ন সভ্যতার বিভিন্নভাবে দিনপঞ্জি প্রণয়নের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তবে সব সভ্যতায় একটি
ব্যাপারে মিল ছিলো, বছরের প্রথম দিন কিংবা
মাস নির্ধারণ করা হতো নবান্নের বা নতুন ফসল
তোলার দিন তারিখের সঙ্গে মিল রেখে।
ব্যতিক্রমও যে ছিল না তেমন কিন্তু নয়! প্রাচীন
মিশরে বছরে সর্বশেষ বার নীলনদের বান
ডাকলে পরে আয়োজন করা হতো নববর্ষের,
কাকতালীয়ভাবে ঐ সময়টি ছিল লুব্ধক নক্ষত্রের
উদয়কাল। চৈনিকরা শীতকাল শেষ হওয়ার পর
দ্বিতীয় পূর্ণ চন্দ্রের দিনে নববর্ষ পালন করত।
জানুয়ারীর ১ তারিখ কেন নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ধার্য করা হলো?

শুরুর দিকে রোমান ক্যালেন্ডারে ছিলো মোটে
৩০৪ দিন, মাস ছিলো ১০ টি। প্রতিটি বছর শুরু
হতো বসন্ত বিষুবের দিনে ব্যাবিলনীয়দের মতো।
এ ক্যালেন্ডারটি তৈরি করেছিলেন রোমের
প্রতিষ্ঠাতা রোমিউলাস। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতক
চলছে তখন। পরবর্তীতে, অপর এক রোমান রাজা
পম্পিলিয়াস জানুয়ারিআস ও ফেব্রুয়ারিআস
(এখনকার সময়ে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) প্রভৃতি
মাসের নামকরণ করেন। পৃথিবীর বার্ষিক গতির
ফলে বছর সম্পন্ন হয়, এক বছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিনে পৃথিবী সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে ঘুরে আসে। কিন্তু রোমান ক্যালেন্ডারে এক বছরে
মাত্র ৩০৪ দিন থাকার কারণে তা সূর্যের বার্ষিক গতির সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ত্রুটিপূর্ণ ক্যালেন্ডার দিনক্ষণের হিসাব রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রখ্যাত রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এ সমস্যার সমাধান করতে চাইলেন। তিনি তৎকালীন রোমের সকল পন্ডিত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের সহায়তা নিলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। এই ত্রুটি সংস্কার করেই পরবর্তীতে প্রণয়ন করা হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার, যার পরিবর্তিত ও সংশোধিত রূপ হচ্ছে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার, যেটি আজকের দিনে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়। জুলিয়াস সিজার বছরের প্রথম দিন হিসেবে পয়লা জানুয়ারিকে বেছে নেন, কারণ মাসটির নাম দেয়া হয়েছিল দেবতা জানুস এর নাম অনুসারে। তিনি ছিলেন রোমানদের সব কিছুর সূচনার দেবতা- জানুস তার দু’টি মাথার একটি দিয়ে পেছনের সব অতীত এবং অন্যটি দিয়ে সামনের সব ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন বলে রোমানরা মনে করত। এই মহান পৌরাণিক দেবতার সম্মানার্থে জানুয়ারি মাসকে বছরের প্রথম মাস ও পয়লা জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রোমানরা। মধ্যযুগের ইউরোপে খ্রিস্টান নেতারা কিছুদিনের জন্য যীশুর
জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বরকে বছরের প্রথম দিন
হিসেবে পালন করেন। পরবর্তীতে, যদিও ১৫৮২
খ্রিস্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগোরি জানুয়ারি
মাসের ১ তারিখকে নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে
পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।
নিউ ইয়ার উদযাপনের ঐতিহ্য
অধিকাংশ দেশেই ৩১শে ডিসেম্বর সন্ধ্যা
অর্থাৎ নিউ ইয়ার'স ইভ থেকে শুরু করে বছরের
প্রথম দিন অর্থাৎ পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত নিউ
ইয়ার উদযাপনের রেওয়াজ রয়েছে। পশ্চিমা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এদিন সবাই ভোজন
উৎসবে মেতে ওঠে, এটিকে সদ্য আগত বছরের
সৌভাগ্যকে বরণ করে নেয়ার রীতি হিসেবে
দেখা হয়। কিছু কিছু সংস্কৃতির মানুষজন শুকরকে উন্নতি ও অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে মনে করেন। 


 এজন্যই নতুন বছরের প্রথম দিনে কিউবা,
অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, পর্তুগালসহ আরো বেশ কিছু
দেশে নতুন বছরের প্রথম দিনে শুকরের মাংস
পরিবেশন করা হয়। এক বছরের চক্র পূরণ করা
নেদারল্যান্ড , মেক্সিকো ও গ্রিসে পরিবেশন
করা হয় বিশেষভাবে বানানো রিং আকৃতির
কেক। সুইডেন ও নরওয়েতে পরিবেশন করা হয়
রাইস পুডিং, যার ভেতরে একটি কাঠ বাদাম
গুঁজে দেয়া হয়। তারা ধারণা করে থাকে
পুডিংটি খেতে গিয়ে যে ব্যক্তি বাদামটি
খুঁজে পাবে তার নতুন বছর সবচেয়ে ভালো
কাটবে! এভাবেই নানা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য
দিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী সবাই জাঁকজমক ও
চাকচিক্যের সাথে পালন করে নতুন বছরের প্রথম
দিনটি।