বিশ্বকবি রোদ্দুর রায়ের বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থের নাম চড়ম ক্যাউড়া কেনো হলো?

সম্ভবত কবিতার পাঠকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশী। কারণ বিগত কয়েকবছরে দেখেছি সবচেয়ে বেশী প্রকাশিত হয় কবিতার বই। আর সবচেয়ে বিক্রি ও কম হয় সেগুলোই। বলাইবাহুল্য এই কবিতাগুলো বেশিরভাগই হলো আধুনিক কবিতা। যার বেশীরভাগের মর্মার্থ বুঝতে হলে স্বয়ং কবিবরের কাছে যাওয়া ছাড়া আর গতি নেই।
এই আধুনিক কবিদের নিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে একটা মজার কথা প্রচলিত আছে। এনাদের অধিকাংশের একটি কমন বৈশিষ্ট্য হলো , এনারা বেশীরভাগই কবিগুরুর মারাত্মক
সমালোচক। সন্ধ্যাবেলা টিএসসি বা হাকিম চত্বরে লাল চা আর টপ গিয়ারের বিড়ি সহযোগে তাঁদের কয়েকজন এর জ্ঞানগর্ভ সাহিত্য সমালোচনা শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছে কয়েকবার্। যা শোনার পরে , "কবিগুরু আসলেই কবি কিনা?" মাঝে মাঝে সেই সন্দেহ আমার মনে পর্যন্ত দেখা দিয়েছিলো। আমার এক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক বড় ভাইকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম ব্যাপারটা। স্মিতহাস্যে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন , "আসলে উনারা কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসেন , কেউ কেউ মোবাইল ফোনেই কাজ সারেন। ল্যাপটপ খুব একটা বেশী কেউ ব্যবহার করেন না। তো ধরে নিন , উনাদেরই কেউ আজ একটি কালজয়ী পদ্য রচনার সংকল্প নিয়ে লিখতে বসলেন। লেখার আগে প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে জানালার ফাক দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন বেশ কিছুটা সময়। আমি বা আপনি দেখলে হয়তো ভুল বশতঃ ভেবে নিতে পারি যে , তিনি হয়তো আকাশের তারা গুণছেন।আসল কাহিনী কিন্তু তা নয়। তিনি তখন ধ্যানমগ্ন হয়ে বিভোর ছিলেন তাঁর কালজয়ী কাব্যটির বিষয় নিয়েই। মোটামুটি হাফ ফ্লাক্স চা আর হাফপ্যাকেট ধুম্রশলাকা ধ্বংস সাধনের পরে কবি শুরু করলেন তাঁর অমর মহাকাব্যের রচনা। প্রতি দুলাইন লেখার পরেই একটু সাময়িক বিরতি নিয়ে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দেন। এরপর আবারো হারিয়ে যান তাঁর অমর মহাকাব্যের সৃষ্টি সাধনায়। এভাবেই পেরিয়ে যায় বেশ কিছুটা সময়। লেখাও প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে ততক্ষণে।অকস্মাৎ প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে দাড়িয়ে পরেন তিনি। চোখেমুখে তীব্র ক্ষোভ ফুটে উঠেছে তার। প্রচণ্ড আক্রোশে টেবিল থেকে কাগজগুলো তুলে নিয়ে তীব্র ক্ষোভে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ছুড়ে ফেলে দেন জানালার বাইরে। রাস্তার উপরের ধূলোয় পথচারীদের পদতলে পিস্ট হতে থাকে বাংলা সাহিত্যের পরবর্তী মহাকাব্যটি। আর বারান্দায় দাড়িয়ে ছিন্নভিন্ন কাগজের টুকরো গুলোর দিকে তাকিয়ে চরম ক্ষোভে কবি বলে ওঠেন ,

 " এটাও শালা রবীন্দ্রনাথ আগেই লেইখ্যা ফেলাইসে!!" আমার সাহিত্যিক বন্ধুবরের চমৎকার ব্যাখাটি শোনার পরে আমার আর দ্বিধা রইলোনা। বুঝতে পারলাম রবীন্দ্রনাথ ,জীবনানন্দ , কাজী নজরুল , মাইকেল মধুসূদন ,বিষ্ণু দে , কামিনী রায় , শহীদ কাদেরী , শক্তি চট্টোপাধ্যায় , রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহরাই হলেন প্রকৃত অপরাধী। তারা আগেভাগেই সব লিখে যাওয়ার অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন। আর সেই কারণেই স্বঘোষিত বিশ্বকবি রোদ্দুর রায়দের "গাণ্ডুরা কেন গাজা খায়" এর মতো "মোকসা" কবিতা দিয়েই বই পাবলিশ করতে হয়। যার সর্বসাকুল্যে ৫ টির বেশী কপি কিছুতেই আর বিক্রি হয়না। যেতে যেতে পথে পূর্নিমার রাতে,চাদ উঠে ছিল গগনে, ঐ দেখ ঐ দেখ চাদ উঠেছে - এরকম সুন্দর গান বের হলেও কফি হাউজের অমলের মতোই প্রতিভার দামটা জোটেনা তাদের কপালে। আধুনিক কবিদের এই দূর্দশার জন্য উনবিংশ শতাব্দীর কবিরাই যে আসলে দায়ী , সে ব্যাপারে আশা করি আপনারাও আমার সাথে সহমত পোষণ করবেন। আধুনিক কবিদের তাই উচিৎ হবে কবিগুরু , সুকান্ত থেকে শুরু করে রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পর্যন্ত সকলের বিরুদ্ধে মরণোত্তর মানহানির মামলা দায়ের করা অবিলম্বে। Oh My God ছবিতে পরেশ রাওয়ালকে দেখেছিলাম ভগবানের বিরুদ্ধে মামলা করতে। তাহলে আর মরণোত্তর মামলাইবা করা যাবেনা কেন বলুন।

একটি প্যারেডি কবিতাঃ
আমি বলছিনা ভালোবাসতেই হবে,আমি চাই
কেউ একজন আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাক,
শুধু মাঝেমধ্যে হাই-হ্যালো বলার জন্য।
বন্ধুদের কাছ থেকে হাহা রিয়েক্ট পেতে-পেতে
আমি এখন ক্লান্ত।
আমি বলছিনা ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে অন্তত ভাইয়া বলুক।আমি ঈদের আগের দিন
কাউকে আমাকে ফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠাতে
বলছিনা,
আমি জানি, এই ফেসবুকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে টাকা খরচের সে দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন মেসেঞ্জারে শত সবুজ বাতির মাঝেও
আমাকে গণ-স্টিকার বা কপি-পেস্ট মেসেজ দিক।
সেইসব স্টিকার আমি নিজেই আবার অন্যদের
পাঠাতে পারব।
আমি বলছিনা ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন মাঝেমধ্যে আমাকে নক করুক।
আমার প্রোফাইল পিকটাকে নাইস-জোস বলুক।
গার্লফ্রেন্ড না হোক, চ্যাট শেষে কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক: 'তোমার লাভ ইমোজিটা এত লাল কেন?'
(নির্মলেন্দু গুণের "তোমার চোখ এত লাল কেন?"
কবিতা অবলম্বনে প্যারোডি "তোমার লাভ ইমোজিটা এত লাল কেন?" )