করোনাভাইরাস নয়, চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে

বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাস আতংক চলছে। একমাসের ব্যবধানে আতংক থেকে বাস্তবে রুপনিয়েছে করোনাভাইরাস সৃষ্ট রোগ। বর্তমানে বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ধনীরাষ্ট্র আমেরিকা থেকে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্থরাষ্ট্র আফগানস্থান, ইউরোপের
ইতালী থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ইরান কোন রাষ্ট্র বাদ পড়েনি করোনাভাইরাসের আক্রমন থেকে। অবশেষে বাংলাদেশে সনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। দায়িত্বশীল
লোকদের দায়িত্বহীনতায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে করোনাভাইরাস। ইতালী ফেরত যাত্রী কিভাবে জীবাণু বহন করে সুরক্ষিত বিমানবন্দর অতিক্রম করলো তার কোন জবাব কারো জানা নাই। দায়িত্বহীনতায় এভাবে কতজন রোগী  বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তা এখন নির্ণয় করা
অসম্ভব হয়ে পড়লো। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা পদক্ষেপ গ্রহণ করার চেয়ে টেলিভিশনে মুখ দেখানোর জন্য বেশী ব্যস্ত আছেন। বাংলাদেশের মতো মধ্যমআয়ের দেশের জন্য করোনাভাইরাস বিপুল পরিমান ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস এবং চামড়া শিল্পে যার প্রভাব পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা হারানোর পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক চাকুরী হারাতে পারে। বেতন বকেয়া পড়তে পারে গার্মেন্টস শ্রমিকদের। ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজম সেক্টর ইতিমধ্যে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। তীর্থযাত্রী, ওমরাহযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষের চলাচলের উপর পড়েছে প্রভাব। দ্রব্যমুল্যের দাম বাড়বে, জনজীবন হবে অতিষ্ট। ব্যবসায়ীরা মুনাফা।খুজবে। করোনাভাইরাসের কারনে পোলট্রি শিল্প থমকে দাড়োবে। রোগ নির্ণয় পদ্ধতি শিখতে সুদুর আমেরিকা ইউরোপ যাবেন সংশ্লিষ্ট এবং।সংশ্লিষ্ট নয় এমন কর্তাব্যক্তিরা। প্রচারমাধ্যমগুলো নানরকম মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন করে মানুষকে করে তুলবে আতংকগ্রস্থ। হুজুগে বাঙ্গালী করোনাভাইরাস সনাক্তকরণের জন্য ছুটে যাবে অনুমোদনহীন ক্লিনিকে। পীর- ফকির-দরবেশ বাবারা পানি পড়া দিয়ে কামাবেন লক্ষ লক্ষ টাকা। ধর্ম ব্যবসায়ীরা কোরআন- বাইবেল-গীতা-ত্রিপটকের কোথায়  করোনাভাইরাসের উল্লেখ আছে এবং কত লোক মারা যাবে তার বয়ান করবেন। ফাঁকিবাজ শিক্ষকরা করোনাভাইরাসের অজুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পায়তারা করবেন। সবজান্তা শমসের মার্কা বুদ্ধিজীবিরা গলাফাটাবেন টেলিভিশনের টকশোতে। সরকারীদল বিরোধীদলের উপর অসহোযোগীতার অভিযোগ আনবেন। বিরোধীদল বিবৃতি দিবেন গনতন্ত্র না থাকায় দেশ আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সচেতনতার নামে তৈরী হবে নাটক থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন। টিকটক বানিয়ে ভাইরাল হওয়ার চেষ্ঠারত থাকবেন একদল মানুষ। নাক-মুখ ঢেকে রাস্তায় চলবেন অতি উৎসাহিরা। সরকারকে করোনাভাইরাসের আতংক থেকে সাধারন মানুষকে রক্ষা করতে হবে। কিভাবে করনোভাইরাস ছড়ায় তা প্রচার করতে হবে। নারী,শিশু এবং যুবকদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবণা কম এটা সবাইকে জানাতে হবে। বয়স্করা ঝুকিতে থাকার কারনে তাদের প্রতি যতœবান হতে হবে পরিবার ও রাষ্ট্রকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানে মৃত্যু নয় এটা প্রচার করতে হবে সর্বস্তরে।  হাঁছি-কাঁশি এবং সরাসরি মানবদেহর মাধ্যমে ছাড়া এজীবাণু ছড়ায় না এবং আগুনের তাপে এটি টিকতে পারেনা এতথ্যগুলি প্রচার করে সবাইকে আশ্বস্থ করতে হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে আক্রান্তদের মাত্র শতকরা দুই ভাগ মারা যাওয়ার রেকর্ড জনগনের সামনে তুলে ধরতে হবে। সঠিক প্রচার প্রচারনার অভাব থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে
আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার আছে। তার কারনে যেন তার পরিবারকে কোন রকম হেয়প্রতিপন্ন হতে না হয়। সংক্রামক ঠেকানোর জন্য জরুরী গৃহিত পদক্ষেপগুলি টেলিভিশন রেডিও এবং পত্রপত্রিকায় প্রচার করতে হবে। আমাদের দেশের প্রায় এককোটি মানুষ পৃথিবীর বিভিন্নদেশে কর্মরত আছেন। যাদের কষ্টার্জিত অর্থ আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। তাদের অধিকাংশই অশিক্ষিত এবং স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলির বাংলাদেশ দুতাবাসের মাধ্যমে তাদেরকে সচেতন করে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে কর্মরত মানুষদের সকল খবারখবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিদিন ব্রিফিং করে জানাতে হবে কারন তাদের পরিবারগুলি সবসময় থাকবে চিন্তাগ্রস্থ।


সামনে বর্ষাকাল। বর্ষাকালে বাংলাদেশীদের সর্দি-কাশির পরিমান বেশী থাকে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে অনেক সময় জ্বর অনুভূত হয়। সকল জ্বর যে করোনাভাইরাস জ্বর নয় এটা জনগনকে বুঝাতে হবে। অর্থনৈতিক ক্ষতির সাথে সাথে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর বছরব্যাপি অনুষ্ঠানমালার। দেশি বিদেশী গুনিজনদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। সতের মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালিত হবে ছোট পরিসরে। যার জন্য সরকারকে দায়ী করা যায়। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বহীনতায় করোনাভাইরাস দেশে প্রবেশ করতে পেরেছে। বিচারহীনতার দেশে আমলাদের বিচার হয়তো কোনকালেই হবে না কিন্তু তাদের দায়িত্বহীনতায় জানমালের ক্ষতির পাশাপাশি জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকী ঠিকমতো পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনাভাইরাস ধাক্কা হয়তো আমরা সামলিয়ে উঠতে পারবো কিন্তু মুজিব শতবর্ষ পাবো না কখনো। মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দেশের কৃষ্টি-কালচার, ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোত্বগাথা থেকে শুরু করে হাজার বছরের ইতিহাস বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারতাম। বিশ্ববাসী শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপশি উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা বাংলাদেশকে চিনতো পারতো নতুন করে। এরকম একটি বড় আয়োজনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সর্তক থাকা প্রয়োজন ছিলো। করোনাভাইরাসের ডামাডোলের মধ্যে যেন নতুন করে চিকুনগুনিয়ার আর্বিভাব না ঘটে সেদিকে নগরপিতাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্ষা মৌসুমে মশারা বেশী তৎপরতা দেখায় । বংশ বিস্তার করার অনুকুল পরিবেশ তৈরী হয় বর্র্ষা মৌসুমে। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় নগরবাসীর সাথে সাথে দেশবাসী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। গত কয়েকবছর মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ায় অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করেছে। গতবছর রীতিমতো মহামারি আকার ধারন করেছিলো। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় একে অপরকে দোষারোপ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মশানিধনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এবছর নতুন নগরপিতারা নতুন নতুন আশ্বাসে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন। তাদের আগাম প্রস্তুতির কথা বারবার জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে । নগরবাসী তাদের উপর আস্থা রাখছে মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য। সারাদেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নজরদারী বাড়াতে হবে গৃহীত পদক্ষেপে। মহামারি আকার ধারণ করার পূর্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বাড়বে। সম্প্রতি নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরগণ শপথ বাক্য পাঠ করেছেন। আগামী মাসেই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। শপথ অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মশার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানে আস্থাহীনতায় ভুগছেন সেখানে সাধারন নাগরিকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে নির্বাচিত মেয়রদের প্রথম কাজ। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আস্থা রেখেছেন একাধিকবারের সংসদ সদস্য, শেখ পরিবারের সন্তান, উচ্চশিক্ষিত ব্যারিষ্টার তাপস এর উপর এবং ঢাকা উত্তরে ব্যবসায়ীদের নেতা আতিকুল ইসলামের উপর। আজন্ম সংগ্রামী ব্যারিষ্টার তাপস এবং ধনবান আতিকুল ইসলাম ঢাকার মশাদের সাথে সংগ্রাম করে ঢাকার নাগরিকদের সুস্থ রাখবেন এ প্রত্যাশা সকলের। তাদের মাথার উপর বটগাছ হয়ে আছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশাকরি তাঁরা মশা নিয়ন্ত্রণ করার নাম করে নাগরবাসীর সাথে মশকরা করবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের উপর আস্থা রেখেছেন। নগরবাসীর সাথে দেশবাসী আশাকরে আপনারা সে আস্থার প্রতিদিন দিতে সক্ষম হবেন। আপনাদের কাছে প্রত্যাশা নগর পিতা হিসেবে প্রথমেই মশা দমনে ব্যবস্থা নিবেন। মশা মারতে কামান প্রয়োজন হলে কামান কিনবেন। তুবুও মশা মারতে হবে নাগরিকদের মরার হাত থেকে বাঁচাতে হলে।
আগামী মাস থেকেই শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। পবিত্র রমজান মাসের পূর্বেই করোনাভাইরাস এবং মশা মোকাবেলা করে দেশবাসীকে সুরক্ষা দিতে হবে। বড় বড় প্রকল্পর নামে হরিলুট বন্ধ করে প্রয়োজনে এখাতে অর্থবরাদ্ধ বৃদ্ধি করতে হবে। তবে অর্থ ব্যায়ের দায়িত্ব দিতে হবে সৎ ও যোগ্য লোকদেরকে। যেসকল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা লাখ টাকার বালিশে শুয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ খোঁজে। যেসকল নগরপিতারা মশা মারার কৌশল জানার নাম করে স্বস্ত্রীক বিদেশ ভ্রমণে যান তাদের প্রতি বাড়তি নজর রাখতে হবে। বাড়ী বা অফিসের সামনের বাগান পরিস্কারের নাম করে যেন কোটি টাকার বিল ভাউচার কেহ না তুলতে পারে সেদিকে নজরদারী বাড়াতে হবে। সরকার তাদেরকে নজরদারীতে রাখতে ব্যর্থ হলেও যেন করোনাভাইরাস এবং মশাকে নজরদারীতে রেখে বাংলাদেশের ষোলকোটি মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে এপ্রত্যাশা সকলের। গুজব বন্ধ করার পাশাপাশি আজব খবর বন্ধ করতে পারলে মানুষের মনের আতংক কেটে যাবে। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবার সাহস পাবেন। দায়িত্বশীল মানুষেরা দায়িত্বশীল মানুষের মতো
দায়িত্ব পালন করলে দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না কোন দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ। মানুষ মানুষের মতো আচরণ করলে মানুষগুলো থাকবে সুরক্ষিত হোক সে করোনাভাইরাস অথবা মশাবাহিত কোন রোগ থেকে। দেশের সকল মানুষ মানুষ হয়ে উঠুক এপ্রত্যাশা ষোলকোটি মানুষের। জয় হোক মানুষের ধ্বংস হোক করোনাভাইরাস এবং মশারা।
সুত্রঃলাখোকন্ঠ