অষ্টম শ্রেনী। তৃতীয় অধ্যায় । রাসায়নিক বিক্রিয়া ও রাসায়নিক সমীকরন

যারা যারা টিউশনি করেন তাদের এবং ৮ম শ্রেণি
ছাত্র ছাত্রীদের জন্য এই পোষ্টটি অনেক
কাজে আসবে।
অষ্টম শ্রেনী। তৃতীয় অধ্যায় । রাসায়নিক বিক্রিয়া ও রাসায়নিক সমীকরন
পূর্ব ধারনাঃ পৃথিবীতে যত পরিবর্তন ঘটে তাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১।রাসায়নিক পরিবর্তন ও ২। ভৌত পরিবর্তন।
রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে রাসায়নিক বিক্রিয়ার
কারনে।


রাসায়নিক বিক্রিয়াঃ যে প্রক্রিয়ায় এক বা
একাধিক পদার্থ পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ন ভিন্ন ধর্ম
বিশিষ্ট নতুন পদার্থে পরিনত হয় তাকে রাসায়নিক
বিক্রিয়া বলে। আরও সহজ ভাবেঃ যে প্রক্রিয়ায়
এক বা একাধিক বস্তু এক বা একাধিক নতুন বস্তুতে পরিনত হয় তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে।

রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে পদার্থের অনুর গঠনের
পরিবর্তন ঘটে। যেমনঃ 2H+O=H2O একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। এখানে H(হাইড্রোজেন) ও O(অক্সিজেন) মিলে আমাদের সুপরিচিত H2O(পানি) সৃষ্টি করেছে। H (হাইড্রোজেন) ও O(অক্সিজেন) হচ্ছে গ্যাসীও পদার্থ, H2O(পানি) হচ্ছে তরল পদার্থ যা H ও O থেকে সম্পূন্ন ভিন্ন।সুতারাং এটি একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া।

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দুটি অংশ থাকে। ১) বিক্রিয়ক ও ২)উতপাদক।
১) বিক্রিয়কঃ যে পদার্থ গুলো রাসায়নিক
বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহন করে তাদেরকে বিক্রিয়ক
বলে। উপরোক্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় H (হাইড্রোজেন) ও O(অক্সিজেন) হচ্ছে বিক্রিয়ক।
২)উৎপাদকঃ রাসায়নিক বিক্রিয়ায়র ফলে যে সকল নতুন পদার্থ উপন্ন করে তাদের উতপাদক বলে। উপরোক্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় H2O(পানি)হচ্ছে উৎপাদক।

ভৌত পরিবর্তনঃ যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের মূল গঠনের পরিবর্ত হয় না তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে। ভৌত পরিবর্তনের ফলে পদার্থের অনুর গঠনের পরিবর্তন ঘটে না। যেমন বরফ কে তাপ দিলে তা পানিতে পরিনত হয় আবার পানিকে তাপ দিলে তা বাষ্পে পরিনত হয়। এখানে পানির অনুর ঘঠনের কোন পরিবর্ত্ন ঘতে নি। সুতরাং এটি একটি ভৌত পরিবর্তন।

রাসায়নিক সমীকরনঃ কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহনকারী বিক্রিয়ক ও উতপাদ সমূহকে প্রতীক, সংকেত ও কতগুলি চিহ্নের (পাটিগানিটিক চিহ্ন যেমনঃ +,-,=,÷,→, ইত্যাদি) সাহায্যে সংক্ষিপ্ত ভাবে প্রকাশ করাকে রাসায়নিক সমীকরন বলে। যেমনঃ 2H2(হাইড্রোজেন)+O2(অক্সিজেন)=2H2O
(পানি) Zn(জিঙ্ক)+H2SO4(সালফিউরিক এসিড) = ZnSO4(জিঙ্ক সালফেট)+H2(হাইড্রোজেন)

রাসায়নিক সমীকরন লেখার নিয়মঃ
1. একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যা ঘটে তাই
সমীকরনে দেখাতে হবে।
2. সমীকরন লেখার সময় বাম দিকে বিক্রিয়ক ও ডান দিকে উতপাদসমূহ লিখতে হবে।
3. বিক্রিয়ক ও উতপাদ একাধিক হলে তাদের
সংকেতের মধ্যে যোগ চিহ্ন(+) দিতে হবে।
4. বিক্রিয়ক পদার্থগুলোর দিক থেকে উতপাদক এর দিকে একটি → চিহ্ন দিতে হবে।
5. রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোন পরমানু সৃষ্টি বা ধংশ হয় না। সুতরাং সমীকরনের উভয় দিকে পরমানুর সংখা সমান থাকতে হবে। অর্থাত সমতা করতে হবে।
6. সমতা প্রাপ্ত হলে বিক্রিয়ক ও উতপাদ এর মাঝে = চিহ্ন ব্যবহার করা যায়।
উদাহরনঃ
1. হাইড্রজেন ও অক্সিজেন মিলে পানি উতপন্ন হয়। সুতরাং সমতা চিহ্নের বাম পাশে বসবে হাইড্রজেন ও অক্সিজেন এবং ডান পাশে বসবে পানি। H2+O2→H2O (সমতা পাপ্ত হয়নি তাই → চিহ্ন) সমীকরনের বাম পাশে আছে ২টি O ডান পাশে আছে ১টি তাই ডানপাশকে ২ দ্বারা গুন করতে হবে। ফলেনডান পাশে হয় 2H2O। কিন্তু এখন H এর সংখা হয়ে যায় 4টি। তাই আমাদের বাম পাশের H কে 2 দ্বারা গুন করতে হবে। তাহলে সমীকরনটি সমতা পাপ্ত হয় এবং আমরা লিখতে পারি । 2H2+O2 =2H2O(সমতা পাপ্ত হয়েছে তাই = চিহ্ন)
2. কার্বন ও অক্সজেন মিলে কার্বন ডাই অক্সাইড
তৈরি হয়। তাই বাম পাশে বসবে কার্বন ও অক্সিজেন ডান পাশে বসবে কার্বন ডাই অক্সাইড।
C(কার্বন)+O2+(অক্সিজেন)=CO2 (কার্বন ডাই
অক্সাইড) এখানে সমীকরনটি সমতা পাপ্ত হয়েছে তাই = চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়াঃ
১.সংযোজন বিক্রিয়াঃ যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায়
দুই বা ততোধিক মৌলিক বা যৌগিক পদার্থ
বিক্রিয়া করে একটি মাত্র যৌগ উতপ্নন করে তাকে
সংযোজন বিক্রিয়া বলে।
যেমনঃ NH3(অ্যামোনিয়া) + HCl(হাইড্রোরিক
এসিড) = NH4Cl(অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড)
২.সংশ্লেষন বিক্রিয়াঃ যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায়
(অথবা সংযোজন বিক্রিয়ায়) দুই বা ততোধিক
মৌলিক পদার্থ বিক্রিয়া করে একটি মাত্র যৌগ
উতপ্নন করে তাকে সংশ্লেষন বিক্রিয়া বলে।
যেমনঃ C(কার্বন)+O2+(অক্সিজেন)=CO2 (কার্বন ডাই অক্সাইড)
৩.বিযোজন বিক্রিয়াঃ যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ
বিভক্ত হয়ে দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগে পরিনত হয় তাকে বিযোজন বিক্রিয়া বলে।
যেমনঃ CaCO3(ক্যালসিয়াম কার্বনেট) CaO
(ক্যালসিয়াম অক্সাইড)+CO2(কার্বন ডাই অক্সাইড)
৪.প্রতিস্থাপন বিক্রিয়াঃ যে রাসায়নিক
বিক্রিয়ায় একটি মৌল অন্য একটি যৌগের অনুর এক বা একাধিক পরমানুকে সরিয়ে নিজেই তার স্থান দখল করে তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে।
যেমনঃ Zn(জিঙ্ক)+H2SO4(সালফিউরিক
এসিড)=ZnSO4(জিঙ্কসালফেট)+H2(হাড্রোজেন)
৫.দ্বিবিযোজন বা বিনিময় বিক্রিয়াঃ যে
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দুটি ভিন্ন যৌগের অনুর মৌল বা মূলক(যৌগমূলক) গুলো পরস্পর স্থান বিনিময় করে একাধিক নতুন যোউগ তৈরি করে তাকে দ্বিবিযোজন বা বিনিময় বিক্রিয়া বলে।