নব্বই দশকের দীপু নাম্বার টু উপন্যাস রিভিউ

পৃথিবীতে জন্মানোর পর আস্তে আস্তে যখন একটি শিশু বড় হয়ে উঠতে থাকে, তখন তাকে খুব স্বাভাবিকভবেই বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো ঘটনা হয়তো বেশ রসালো, আবার কোনোটা একটু তিক্ত। অনেক
সাফল্যগাঁথার পাশাপাশি থাকে মর্মান্তিক বেদনা। ধীরে ধীরে শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যায়। তবে পেছনে পড়ে থাকে কিছু স্মৃতি। সেসব স্মৃতির কোনো অংশ মনে পড়লে যেমন মনের অজান্তেই আমরা হেসে উঠি, ঠিক তেমনি করেই কোনো কোনো স্মৃতির রোমন্থন করে শিউরে উঠি নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেয়া প্রায় প্রতিটি শিশুর জীবনের একটা সময় পর্যন্ত তার সবচেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্রের স্থানটি দখল করে রাখে ‘দীপু নাম্বার টু’। ছোটবেলায়এই চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে কতবার যে দীপুর সাথে রাঙ্গামাটিতে ঘুরে আসা
হয়েছে তার যেমন কোনো হিসেব নেই, ঠিক তেমনি দীপুর মতো রোমাঞ্চকর এবং দুঃসাহসিক অভিযানে দীপুর স্থলে নিজেকে কল্পনা করা দর্শকের সংখ্যাও নেহায়েৎ কম নয়। এমনকি এখনো অনেক তরুণ-তরুণীর মনের কোনো এক
কোণে জমে থাকা এক চিলতে আবেগের
নাম ‘দীপু নাম্বার টু’। মানুষের ছোটবেলার স্মৃতির একটি বিশাল অংশ জুড়ে থাকে বেড়ে ওঠার সময়কার বন্ধুরা, খেলার সাথীরা। ক্লাসের ফাঁকে ছোট ছোট খুনসুটি, টিফিনের সময় বন্ধুর খাবার নিয়ে লুকোচুরি, ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলার মাঠের দুরন্তপনা কোনো কিছুই বাদ যায় না স্মৃতির পাতা থেকে। দুরন্ত ডানপিটে বন্ধুদের দাপুটে স্বভাবের ভিড়ে শান্তশিষ্ট ঘরকুনো বন্ধুদের
কথাও হারায় না স্মৃতির হার্ডড্রাইভ থেকে। তবে
বন্ধুরা যে যেমনই হোক না কেন, সে বন্ধুত্ব ছিল নিষ্পাপ ও জলের মতোই স্বচ্ছ। এই বিভক্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্ত বাঁধন ছিল এই বন্ধুত্ব। আর এমনই একঝাঁক বন্ধুত্বের গল্পে ভরপুর, দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ একটি স্মৃতির নাম ‘দীপু নাম্বার টু’। 
দীপু
সংসারে দুজন ব্যক্তি – আব্বা ও দীপু। দীপু
জানে ওর মা বেঁচে নেই। দীপুর বাবার খুব অদ্ভুত স্বভাব, কোনো জায়গাতেই বাবার তিন- চার মাসের বেশি থাকতে ভালো লাগে না।প্রতি বছর-ই দীপুর বাবা পোস্টিং নিয়ে নতুন নতুন জায়গায় যান; খুব স্বাভাবিক ভাবেই দীপুকেও বাবার সাথে ঘুরতে হয়। প্রতি বছর- ই সে ভর্তি হয় নতুন স্কুলে। এরই ধারাবাহিকতায় সে ক্লাস এইটে ভর্তি হয় নতুন স্কুলে। ভর্তির প্রথম দিনেই দীপুর ভালো লেগে যায় এই নতুন স্কুল। তারিক ছাড়া প্রায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার। ঘটনাপ্রবাহে তারিক হয়ে ওঠে দীপুর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। 
তারিক
এক পর্যায়ে দীপু জানতে পারে ওর মায়ের কথা। জানতে পারে, বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বহুদিন আগে আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন।
দেশে এসেছেন কয়েক দিনের জন্য। ছেলেকে দেখতে চেয়ে বাবাকে চিঠি লিখেছেন। দীপু একা একাই মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকায় যায়। মাকে পেয়ে দীপুর মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি জেগে ওঠে। তারপরও সে আবার ফিরে আসে বাবার কাছে। মা ফিরে যান আমেরিকায়। এদিকে
দীপু জানতে পারে তারিকের অপ্রকৃতিস্থ মায়ের কথা। তারিকের স্বপ্ন টাকা আয় করে ওর মায়ের চিকিৎসা করাবে। এরপর শুরু হয় দুঃসাহসিক
অভিযান।

 বুদ্ধি আর সাহস খাটিয়ে দীপু, তারিক আর ওদের বন্ধুরা দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
মূর্তি পাচারকারী চক্রকে ধরিয়ে দেয়। বইটি অবলম্বনে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রীয় অনুদানে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। চলচিত্রটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম। ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অরুন সাহা। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, আবুল খায়ের, গোলাম মুস্তাফা, শুভাশীষ সহ আরও অনেকে। 

বুদ্ধিজীবি, কলামিস্ট, গল্পকার, ঔপনাসিক,বিজ্ঞান লেখক স্যার মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলাদেশের ছোট বড় প্রায় সব বয়সি মানুষের কাছে এক জনপ্রিয় নাম। তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য প্রতি
বছরই নতুন নতুন গল্প নিয়ে হাজির হন। যার মাঝে বেশি গল্পই থাকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নিয়ে। গল্পগুলো সত্যিই কল্পনা জগত কে প্রসস্থ করে দিতে টনিকের মতো কাজ করে। সাথে নতুন জ্ঞান মস্তিষ্ককে উৎজীবিত করে। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধ, গনিত অলিম্পিয়াড নিয় বই লিখে থাকেন। কাহিনী সংক্ষেপেঃ প্রখ্যাত লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা দীপু নাম্বার টু অন্যতম
শ্রেষ্ঠ কিশোর উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৮৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হলে জনপ্রিয় হতে থাকে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচিত্রও নির্মাণ করা হয়েছে। উপন্যাসের কীহিনী অনুসারে দীপুর পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুই জন। একজন সে আর আরেকজন তার বাবা।